ইয়াবা গডফাদার বদির ইশারায় চলতো উখিয়ার পশ্চিম ডিগলিয়া রাবার ড্রাম

নিজস্ব প্রতিবেদক, উখিয়া:

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পশ্চিম ডিগলিয়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড পরিচালনা করতেন টেকনাফের ইয়াবা গডফাদার আব্দু রহমান বদি৷

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী ছিলেন অঘোষিত সভাপতি এবং রাজাপালং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সালাহউদ্দিন ছিলেন অঘোষিত সাধারণ সম্পাদক। এই তিনজনের নেতৃত্বে আইওয়াশ নির্বাচন দিয়ে সিলেকশনে কমিটিতে পদ ভাগিয়ে নেন আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্যরা৷

গত সংসদ নির্বাচনের আগে অত্র সমিতির সভাপতি জাহেদের নেতৃত্বে বার্ষিক সাধারণ সভা নাম দিয়ে উখিয়া টেকনাফের সাবেক এমপি ইয়াবা গডফাদার আব্দুর রহিম বদিকে প্রধান অতিথি করে সাবেক সংসদ সদস্য শাহিনা আক্তার, জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, সালাহউদ্দিন মেম্বার ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কামরুনেছা বেবী সহ উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের রাজকীয় সংবর্ধনা দিয়েছিলেন। যেখানে বিএনপি পরিবারের বা সমর্থনের কাউকে অতিথি বা সদস্যদের দাওয়াত করা হয়নি৷

এরআগে ২০২২ সালে আওয়ামী লীগের প্যানেল বিজয়ী হওয়ার সাথে সাথে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হাজির হয় উক্ত কমিটি৷ সেখানেই ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন মেম্বার সহ আওয়ামী লীগের নেতাদের৷ এরপর থেকে শুরু হয় লুটপাট। সদস্যদের মাসিক ফি নামে চলে গণ চাঁদাবাজি। সেগুলো ভাগবাটোয়ারা করে সভাপতি জাহেদের নেতৃত্ব। ম্যানেজ করতেন আওয়ামী লীগের নেতাদেরও৷ গাইড ওয়াল নাম দিয়ে নয়ছয় করে সেখানেও ভাগ বসায় উক্ত কমিটি। শুধু তাই নই উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে যদি কৃষকদের কোনো সহযোগিতা আসলে সেগুলোর আলোর মুখ দেখেনি কেউ, কমিটিই ভাগ করতেন৷

গত ২৪ সালের জানুয়ারি মাসে পানিতে নৌকা নামিয়ে ২০ লাখ টাকা আয় করা হয়েছে৷ এই পানিতে অনুষ্ঠানিক নৌকা নামানো উদ্বোধন করেন জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির বড় ভাই হুমায়ুন কবির চৌধুরী৷ সেখান থেকেও বড় একটি টাকার অংক গায়েব হয়ে যায়৷ সমিতির নামে একাউন্ট থাকলেও নামকে ওয়াস্তে। গত ২ বছরে এক টাকাও জমা দেয়নি চলমান কমিটি।

পশ্চিম ডিগলিয়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সদস্য হওয়ার জন্য লাগে আওয়ামী লীগের পরিবারের সদস্য৷ আওয়ামী লীগ করলে তাকে অনায়াসে সদস্য করেন জাহেদের কমিটি। দিতে হয়না কোনো ফি৷ যদি বিএনপি পরিবারের কোনো সদস্য ফরম সংগ্রহ করলে তাকে গুনতে হয় ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা৷ বিএনপি করে নদীর জমানো পানি ব্যবহার করতে দিতেন না।

এই সমিতি উপজেলা সমবায় নিয়ন্ত্রণ করে নামকেওয়াস্তে। আওয়ামী লীগের ইশারায় চলা এমন কমিটি নিয়ে এলাকার মাঝে হইহট্টগোল সৃষ্টি করেছে তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের। তাঁরা বলছেন, দেশের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বিভিন্ন দপ্তরের কমিটি বিলুপ্ত হলেও এই কমিটি কেন বিলুপ্ত হবে না প্রশ্ন সাধারণ কৃষকদের৷ কমিটির বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে দেওয়া হতো হুমকি ধামকি এবং মিথ্যা মামলা।

এই কমিটির সদস্য সংখ্যা ১২ জন তারমধ্যে ১০ জন আওয়ামী লীগ পরিবারের বাকী দুজন বিএনপি পন্থী আওয়ামী লীগের সাথে লিয়াজু করে সুবিধার জন্য কমিটিতে আসেন।

স্থানীয় বিএনপি নেতা জানান, যেখানে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রী দেশত্যাগ করেছে সেখানে আওয়ামী লীগ প্যানেলে দূর্ণীতিবাজ কমিটি কেন বিলুপ্ত করা হবে সেটা নিয়ে দায়িত্বশীলদের প্রশ্ন৷ যদি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কমিটি বিলুপ্ত না হয় তাকে টেনে নামানো হবে৷

এবিষয়ে অত্র কমিটির সভাপতি জাহেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি ফোন রিসিভ করেনি৷ কমিটির অন্য সদস্যদের কল দেওয়া হলে মুখ খুলতে নারাজ।

তবে নাম প্রকাশ না করাশর্তে গত কমিটির এক নেতা জানান, বর্তমান কমিটি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী এবং অত্র ওয়ার্ডর ইউপি সদস্য সালাহউদ্দিন মেম্বারের সিলেক্টেড কমিটি। এই কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন করে আহ্বায়ক কমিটি দিলে সাধারণ গরিব মানুষ গুলো উপকৃত হবে৷

এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সমবায় সমিতির কর্মকর্তা সেলিম উল্লাহ জানান, পশ্চিম ডিগলিয়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ থাকলেও লিখিতভাবে কোনো অভিযোগ এখনো পাইনি৷ যদি কেউ লিখিত অভিযোগ দেয় তাহলে কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷